মানুষ, শত্রু মানুষ

একদিন মানুষের শ্ত্রু ছিলো বন্য জীবজন্তু ও সাপ। আজ মানুষের শত্রু মানুষ। মানুষের বড় প্রতিযোগিতা কে সবচেয়ে শক্তিশালী ও মারণাস্ত্র তৈরী করতে পারে। এইমাত্র যে শিশুটি জন্মগ্রহন করলো তার জন্য একফোঁটা দুধ বরাদ্ধ নেই অথচ তাকে হত্যা করার জন্য বরাদ্দ রয়েছে লক্ষ্য কোটি ডলার পাউন্ডের অস্ত্র।

নীল বৃষ্টি

নার্স রাতের শেষ ঔষুদটা খাইয়ে দিল কিছুক্ষণ আগে। জানতে চেয়েছিল আর কিছু লাগবে কিনা। ম্লান একটা হাসি দিয়েছি। এর দুটো অর্থ। না এবং তোমাকে ধন্যবাদ। দিনের পর দিন এখানে থাকতে থাকতে এই সব অর্থ তারা ঠিক বুজে নিতে পারে। গুড নাইট বলে বিদায় নেয় নার্সটি। যদিও তারা জানে এই ওয়ার্ডের কেবিনের মানুষদের গুড নাইট আসে না। মাজ রাত্রিতে শরীরের সাথে লাগানো ডজন খানেক তারের অপর প্রান্তে লাগানো মেশিনটা যখন বিপ বিপ করে উটে, সত্যিই তখন সেটা আর গুড থাকেনা। সেকি ব্যস্ততা রুগীকে নিয়ে। আমার নিজের ক্ষেত্রেই কয়েকবার হয়েছে। তবে নিজের ক্ষেত্রে এইসব কিছুই মনে থাকেনা, আবছা আবছা বিশেষ কিছু মুহূর্ত ছাড়া। তবে আমার পাশের ‘সাথী’দের যখন সেরকম পরিস্থিতি আসে তখন বুজতে পারি। মধ্যখানে পর্দা থাকায় সেটা যদিও দেখা যায় না তবে তাদের কথা বার্তায় ঠিক বুজতে পারি। আমরা এই ওয়ার্ডে মোট তিন জন। আমি মধ্যখানে, ডানপাশে একজন মহিলা বয়স ৯২, বাম পাশে ৬৭ বয়সের একজন পুরুষ। একমাত্র আমিই তুলণামুলকভাবে কম বয়সের। আচ্ছা তুলনামূলক বলছি কেন? আমার বয়সটা কি সত্যিই কম না?
মাথার উপর অনুজ্জ্বল আলোটা একটু বাড়িয়ে দেই। গতকাল ওঁর দিকের এক আত্মীয় আমাকে দেখতে আসেন, তিনটা বাংলা বই নিয়ে আসেন সাথে। আসলে ইংল্যান্ডে আসার পর বাংলা বই ছোঁয়া তো দুরের, চোখেই দেখিনি। তাই উনার হাতে বই দুটি দেখে এতই আশ্চর্য হয়ে ছিলাম যে উনাকে ধন্যবাদটুকু দিতে ভুলে গিয়েছি। আমার তো কল্পনায়ই আসেনি এই হাসপাতালে শুয়ে বাংলা বই পরতে পারব।
বইটি খুলে আমি ধাক্কা খেলাম, পৃষ্ঠার লাইন গুলো প্রায় অস্পষ্ট। হাত দিয়ে চোখ কচলিয়ে নিলাম। এই রোগটাতো আমার সব কিছুই কেড়ে নিচ্ছে। বেঁচে যদিওবা যাই কি নিয়ে বেঁচে থাকব? হাত থেকে বইটি নামিয়ে বালিশের কাছে রেখে দেই। মাথার উপরের রিডিং লাইটা নিবিয়ে দেই। বারান্দার আলো রুমটা সম্পূর্ণ অন্ধকার হতে দেয়নি। কিন্তু আমার চোখ? সেতো কেবল অন্ধকারই দেখে। গত এক বছর থেকে সেই অন্ধকার দেখে আসছে। ‘বোন ক্যান্সার’ এ আক্রান্ত প্রতিটি দিন অন্ধকারের ছায়ায় ঘেরা।
আচ্ছা আমার কি এখন এই হাসপাতালের বেডে শুয়ে এইসব ভাবার কথা? আমারতো……। চোখ বন্ধ করি আমি। আমার পেটের বাচ্চাটা বাসায় কেঁদেই যাচ্ছে, আর আমি?
পেটের বাচ্চাইতো! নির্ধারিত তারিখের ২ মাস আগেই তাকে পৃথিবীতে নিয়ে আসা হল। সাথে নিয়ে আসল হাজারটা প্রবলেম, রাখতে হল আই সি ইউ তে তিন সপ্তাহ। আমার নিজেকেও থাকতে হল সপ্তাহ দুই। আমি যখন হাসপাতাল থেকে রিলিজ হলাম, সবারই মত আমারও ভালো লাগার কথা, কিন্তু লাগেনি। মায়েরা হাসপাতালে যায়, পেট কাটে, দু চার দিন পর বাচ্চা নিয়ে বাসায় চলে আসে। আর আমি, কতদিন পর বাসায় যাচ্ছি, তাও আবার বাচ্চা ছাড়া। হায় আল্লাহ, সেটাওতো আমি মেনে নিয়েছি।
তার পরই জানতে পারলাম আমার অসুস্থতার কথা। প্রথম দিকে খুব খারাপ লাগত, সব সময় ক্লান্ত লাগত, ভাবতাম মাত্রইত বাচ্চাটা প্রসব করেছি (আসলে বাচ্চাটা সিজারিয়ান হয়েছে, এটাকে কি বলা যা? বাচ্চাটা মাত্র সিজারিয়ান করিয়েছি? শুনতে খারাপ লাগেনা!) তারপরও অসুস্থতার মধ্যেও দিনগুলো ভালো কাটছিল। বাচ্চাটাকে প্রতিদিন দেখতে যেতাম। তার উপর আমার ডাক্তার, টেস্ট ইত্যাদি প্রায় দিনই থাকত। সপ্তাহ দুই পরে বাচ্চাটা বাসায় আসল, কিন্তু ততদিনে আমি আর আমার থাকলাম না। শুধুই শরীরটা নিয়ে কোনভাবে চলছিলাম। যদিও সেই চলাকে কতটুকু ‘চলা’ বলা যায়। বাচ্চাটা কাঁদতেও পারেনা ভালো করে। নিজের কাছে খুব খারাপ লাগত, নিজের স্বার্থের জন্য দুধের বাচ্চাটাকে বাসায় রেখে…… ইস! ‘বিড়ালটা কেমন করে যে মিট মিট করে তাকায়। বুকটা ভেঙ্গে যায়। হাসপাতালে ভর্তি হবার পর প্রথম দুদিন আমার শাশুড়ি ‘বিড়াল’ টাকে এনেছিলেন, যাবার সময় সেই একই চাহনি। তাই আমিই বলে দিয়েছি বাচ্চাটাকে না আনতে।
বাহিরে কি বৃষ্টি হচ্ছে? হতেও পারে। বুজার উপায় নেই। এমনকি সারা শহর যদি ধ্বংস হয়েও যায়, এই বেডে শুয়ে বলা যাবে না। বাহিরের জগতের কথা কেবল জানতে পারি ও’ যখন আসে। ও’ মানে আমার স্বামী। শুধু স্বামী বললে ওঁর প্রতি অবিচার করা হবে। ও’ত স্বামী’র স্থান ছেড়ে অন্য এক স্থানে চলে গেছে যেটা কেবল আমি জানি। একজন মানুষ আরেক জন মানুষের জন্য নিজের সবটুকু বিসর্জন করতে পারে আমার সেটা জানা হল ওঁকে দেখে। কি এক আশ্চর্য মনোবল দিয়ে ওঁ আমাকে আগলে রাখছে। ওঁ পাশে না থাকলে….; যাহ্‌ কেন যে বার বার অশ্রু আসে চোখে। ওঁকে আমি কোনভাবেই এই পানি দেখাতে চাই না। একটা মানুষ তার স্ত্রী কে হাসি খুশি রাখার এমন কোন চেষ্টা বাকি রাখছেন সেখানে কেন আমি আমার চোখের পানি দেখাব? ওঁর আমাকে নিয়ে ব্যস্ততা দেখে ইচ্ছে করে ওঁকে বলি ‘তুমি কেন এতসব করে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছ, তারচেয়ে আমার পাশে এসে বসে থাক’। কিন্তু বলি না। থাক না, একটা মানুষ যখন এতে আত্বতৃপ্তি পাচ্ছে, তার মৃত পথ যাত্রী স্ত্রীর প্রতি এতটুকু করার সুযোগ নিচ্ছই আমার দেওয়া উচিত। অবশ্য ওঁ যে চায় না, তা না, মাজে মধ্যে পাশে এসে বসে আমার হাত নিয়ে নাড়াচাড়া করে। আমি বুজি, লজ্জায় ওঁ আমার হাত কে তার হাতের মধ্যে মুষ্টি বদ্ধ করতে পারেনা। আমার খুব হাসি পায়। নিজের স্ত্রীর হাত ধরতে এত লজ্জা! আচ্ছা ওঁ কি আমার চলে যাওয়ার পর আরেকটা বিয়ে করবে। আমি জানি ওঁ করতে না চাইলেও থাকে করতে হবে। ওঁর ফ্যামিলিও চাপ দিবে, তাছাড়া ‘দুধের বাচ্চাটাকে’ কে দেখবে? আচ্ছা আমি কি সত্যি সত্যিই মারা যাচ্ছি? ডাক্তাররা আমাকে কিছু বলেনা, তবে ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে মাজে মাজে আমি বুজতে চেষ্টা করি। একটা ডাক্তার আছে, বয়স অনুমান করা কঠিন, চুল ভ্রু একদম সাদা, কিন্তু হাতের মুখের চামড়ায় একটুও ভাঁজ নেই। এই ডাক্তার মাজে মধ্যে আসেন। বুজতে পারি খুব উপরের স্তরের স্পেশালিষ্ট। আমার যখন অসুস্থতা বেড়ে যায় তখন উনি এসে দেখে যান। লোকটা মাজে মাজে এমন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, আমি কিছু বলতে পারিনা, কিন্তু কেন জানি মনে হয় তিনি আমার দিকে থাকিয়ে নিঃশব্দে কিছু বলছেন। আচ্ছা উনি কি আমার মৃত্যু নিয়ে মোটা মোটি নিশ্চিত?
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে আমার তেমন খারাপ লাগে না। ভাবছেন পাগল আমি? না, আসলেই আমার খারাপ লাগে না, শুধু অসুস্থতা যখন বেড়ে যায় ঐ মুহূর্তগুলো ছাড়া তেমন কোন ক্লান্তি নেই। এক গেয়েমি লাগেনা? খুব লাগে, তবে আমি লাগতে দেইনা।
আমি আমার স্মৃতির প্লেয়ারটাকে রেওয়াইন্ড করে দেই। আমার শৈশব, কিশোরী জীবন, কলেজ জীবন।
মফস্বল শহরে বেড়ে উঠা আমাদের, আমাদের এক ভাই আর দু বোনের মধ্যবিত্ত পরিবারে। বাবা ছিলেন আমাদের স্থানীয় এলাকার ইউনিয়ন মেম্বার। বোনটা আমার বড়, আমার ছোট ভাই আর আমি পিটাপিটি। খুব ভালই যাচ্ছিল সময়গুলো। এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ। বাবা মা’র কথা কানে আসে। আমার বিয়ের আলাপ আসছে!
এবং শেষমেশ বাসায় এসে কনে দেখা! দেখার অবশ্য কিছু ছিল না। কারন দেখতে আমি মোটামুটি সুন্দরীই ছিলাম! দেখতে এসে ফিরে যাবে এই রকম সম্ভাবনা কম ছিল।
আপু, তোর কি ভাগ্য, সুন্দরী মেয়ে, লন্ডনী বর পেয়ে গেলি কত্ব সহজে! – বলেছিল ছোট ভাইটি আমার।
– তুইও কি তাই মনে করিস, আমার চেহারাই আমার লন্ডনী বর পাওয়ার একমাত্র কারন!
কিছুটা আমতা আমতা করে বলল; ঠিক তা না, বাদ দে, অন্তত বিয়ে তো হচ্ছে, আমার তো সে চান্স নাই। পড়াশুনা শেষ করতে হবে, না হয় কিছু একটা করে নিজের পায়ে দাড়াতে হবে- তার আগে বিয়ে করা যাবে না! কেমন লাগে বলত!
-অরে বিয়ে পাগল, বলব নাকি মা’কে যে তার ছেলের বিয়ে করতে মুন চায়! নাকি কাউকে বিয়ের আশায় বসিয়ে রেখেছিস!- বললাম আমি !
-ধ্যাত, তুমি কি যে বল না! যাও, নিজের বিয়ে নিয়েই এখন ভাব গিয়ে, আমারটা না ভাবলেও চলবে।
আমরা যত না ছিলাম ভাই বোন তার চেয়ে বেশি ছিলাম বন্ধু!
কি কান্নাটাই না করল আমার বিদায়ের দিন।
আপু, তুমি সত্যিই চলে যাবে! আমি ঠিক মেনে নিতে পারছিনা! কি দরকার ছিল তোমাকে লন্ডনী বরের কাছে বিয়ে দেয়ার! আমার আর কোন বন্ধু থাকল না! আমি এখন কাকে নিয়ে বিকেলে চা খাব! ছাদে আড্ডা দিব! আমার সারাদিনের কর্মযজ্ঞ কি আগ্রহ করে শুনবে! আপু তুমি সত্যি চলে যাবে?
কি বলতে পারি আমি তাকে? আমার বুকের যে চিন চিনে ব্যথা আর হাহাকার, আমি কিভাবে বলতে পারতাম তাকে।
পাগল! মনে হচ্ছে আমি চিরদিনের জন্য যাচ্ছি? আর তর দুলাভাই তো বলেছেই সেখানে গিয়ে তকে নেওয়ার একটা ব্যবস্থা করবে। – তার সেই বিষাদের কথাগুলোর প্রতিদত্তরে বলেছিলাম আমি।
-নারে আপু, আমি তোকে হারিয়ে ফেলছি! আমি চাইনা আর তকে ফিরে পেতে!

কি অদ্ভুত দার্শনিক কথাগুলো ছিল আমার ভাইটার।কি অসহ্য ছিল কথাগুলো! আমি আজও সে মুহূর্তের অনুভূতিকে চোখের পানিতে শোধ দিতে পারিনি।

না, এর পর আর দেশে যাওয়া হয়নি। যাচ্ছি যাচ্ছি করে যাওয়া হল না! আসলে যাওয়াটা আমার কাছে নয়! আমার স্বামীদের তেমন কোন আত্বীয় নেই
যে সে টানে দেশে যাবেন। এখন যাওয়া বলতে আমার বাবা মা ভাই বোনদের দেখতে যাওয়া। তাই, দেশে যাওয়ার জন্য মনটা চট পট করলেও মুখ দিয়ে ওকে বলতে পারি নি দেশে বাবা মা, ভাই বোনদের দেখতে যেতে চাই। আমি অপেক্ষা করছিলাম ও’ নিজ থেকে বলুক।
আমি শুধু কল্পনা করে যাই, আমাদের সেই সব দিনগুলোর কথা।
‘আপু, টাকা দে’। এল আর বি’র নতুন এলবাম এসেছে!’ আসলে ও এল আর বি’র গান এতো শুনতে যে তার সাথে সাথে আমি এক সময় এল আর বি’র গানের ভক্ত হয়ে গেলাম! তাই আমরা দুজন শেয়ার কিরে ক্যাসেট কিনতাম। ও’কি এখনো শুনে এল আর বি’র গান- ‘এখন অনেক রাত’ কিংবা ‘অসুস্থ আমি এক হাসপাতালে’।
আমার চোখের পানি গড়িয়ে পরে। কি যে এক প্রশান্তি। সত্যি আমার খারাপ লাগে না। মাজে মাজে ও’ আমার গালের পাশে চোখের পানি দেখ ঘাবড়ে যায়!
-প্লিজ, তুমি মনোবল হারিয়ে ফেলনা। তোমার এই অসুখটা থেকে ভাল হতে যত না শারীরিক শক্তির প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন মানসিক বল। ডাক্তারও তো সেই কথা বলেছে!
আমি হাসি! কি বলব। আমার চোখ দিয়ে কেন পানি আসে সেটা কি ও’কে বুজানো যাবে!
আমি ও’কে আমার পাশে এসে বসতে বলি!
-কি? তোমার ইচ্ছা হয়না?
-কি ইচ্ছে হয়না!
-আমাকে আদর করতে, ভালোবাসাবাসি করতে?
ও’আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
আমি তার সে তাকানোটাকে উপভোগ করি।
বেশি রাত হয়ে গেলে ও হাসপাতালে থেকে যায়। আমরা সারারাত গল্প করি! ও’র মোবাইলে স্টোর করা আমাদের বিয়ের পর থেকে তোলা সকল ছবি একটি একটি করে দেখি।
আমরা প্লান করি বাচ্চাটা আরেকটু বড় হয়ে গেলেই এবার দেশে যাব। কি কি কেনা কাটা করতে হবে তার একটা রাফ করি।
আসলে এরকম রাত খুব কম আসে যখন আমরা আমাদের প্ল্যান শেষ করতে পারি! আমি ক্লান্তিতে নেতিয়ে পরি কিংবা শরীরের সাথে লাগানো মেশিন বিপ বিপ করে উঠে! আমার সামনে বসা কিংবা আমার মাথার কাছে বসা মানুষটি ঝাপসা হয়ে আসে! ঝাপসা হয়ে আসে আমার চারপাশ! দেয়ালের পেন্টিং,পর্দা। তখন একটাই কথা মনে হয়- কেবল মনে হয় এই ঝাপসা হয়ে আসাটাই স্থায়ী হবে চির অন্ধকার হিসেবে। আমি যেন তখন ‘অন্ধকার থেকে অন্তহীন আধার খুঁজি!’

দীর্ঘশ্বাসের ব্যাকুলতা

তোমাকে ছুতে চেয়েছিল আমার দীর্ঘশ্বাস
তুমি বলেছ, ইদানীং তোমার ভীষণ ক্লান্তি,
তাই মেঘ ছুয়ে যায় নীল আকাশের শরীর।
আমার অনুভূতির কার্নিশে কাক জোছনা
নিভির আলিংগনে স্মৃতির রোমন্থন
শুধু জানা হয়ে উঠেনা, ইদানীং তোমার,
ভেঁজা চোখের পাপড়ি জুড়ে কিসের এত ব্যাকুলতা?
25/08/14

image

নাটকের আড়ালে কি?

পরিবর্তিত সমাজ কাঠামোতে সামাজিক চিন্তা চেতনার পরিবর্তন ঘটবে স্বাভাবিক। কিন্তু এই পরিবর্তনটার ধরন যদি আমরা বিচার করি তবে একটি সূচক চোখে পরে। উর্দ্ধে কিংবা নিম্নে।
কথাগুলো আরো বিশদ করে হয়ত বলা যায়, কিন্তু তার চেয়ে লিংক এ গিয়ে নাটকটি দেখে আসলে আমার সেটির প্রয়োজন পরবেনা। নাটকটির নাম শিরোনামহীন

তবে যে বিষয়গুলো নাটকটিতে ইচ্ছা করে, বলা যায় ‘ওয়ার্ম আপ’ হিসেবে নিম্নোক্ত বিষয়কে আমাদের সামাজিক কাঠামোতে স্বাভাবিক হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার একটা চতুর প্রয়াস।
১ঃ একটি মেয়ের তার অন্য আত্বীয়ের (সে আপন বড় ভাই হোকনা কেন) চেয়ে তার সাবেক এক ছেলে বন্ধু বেশি আপন।
২ঃ সে ছেলে বন্ধুর ফ্ল্যাটে মাজরাতে যাওয়া যায় এবং সে ছেলেটি তাকে খুভ স্বাভাবিকভাবে গ্রহন করে। যেন একটি প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে তার সাবেক প্রেমিকের বাসায় মাজরাতে ছুটে আসা খুভই স্বাভাবিক!
৩ঃ মাজরাতে অন্যের স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ট হয়ে বসা, মুখে খাবার তুলে দেওয়া অন্যায় কিছু নয়। (ঐ রুমান্টিক মুহূর্তে আবেগঘন আবহ সঙ্গীত শুনে সেটাই বুজা যায়)
৪ঃ একটি অবিবাহিত প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের সাথে বিবাহিত মেয়ের রাত কাটানো অস্বাভাবিক কিছুই না।
৫ঃ মাজ রাত্রীতে মেয়েটির ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া এবং ছেলেটির কাছে আসা যদিও মানবিক আবেগকে তুলে দেওয়া হয়েছে কিন্তু মনোবিজ্ঞান কি শুধু মনেরই কথা বলে, শরীরের কি কোন কথা বলে না?
৬ঃ স্কুল/কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের তার গানের শিক্ষকের বাসায় স্কুল কলেজ ফাকি দিয়ে চলে আসতে পারে।
৭ঃ একটি মেয়ে সারাদিন একটি ছেলের ফ্ল্যাটে কাটিয়ে দিতে পারে; পরিবারের তাতে কোন দায় বা দায়িত্ব কোনটাই নেই। স্কুল/কলেজ পড়ুয়া মেয়ে কোথায় যায়, কার সাথে সময় কাটায়, কিভাবে সময় কাটায় তার কোন জবাবদিহিতা নেই।
৮ঃ একটি অবিবাহিত প্রাপ্ত বয়ষ্ক ছেলের বাসায় যে কোন মেয়ে যে কোন সময় আসতে এবং যেতে পারে, অবস্থান করতে পারে; সমাজেরও কারো তাতে কিছুই যায় আসেনা।
৯ঃ একট বিবাহিত মেয়ে ডিভোর্সের কাগজ পত্রের সমাধান হওয়ার আগেই আরেকটি বিয়ে করতে পারে, তার জন্য ছেলেটিও রাজিও থাকে। (মেয়েটি যেহেতু ইসলাম ধর্ম মতে বিবাহিত, সুতরাং তালাক বা ডিভোর্স হয়ে গেলেও নুন্যতম তিন মাস অতিক্রান্ত না হয়ার পুর্ব পর্যন্ত অন্য কারো সাথে বিবাহে আবদ্ধ হতে পারে না। অথচ এখানে সেটাই প্রায় সম্ভব করে দেওয়া হয়েছে।)
—–
এই রকম নাটক দিয়ে আমাদের কি ম্যাসেজ দেওয়া হচ্ছে সেটা যত তাড়াতাড়ি উপলব্দধি করা হবে ততই মঙ্গল।
আরো আশ্চর্য্য এই নাটকটি এনটিভি তে এসেছে যার মালিক, পেয়ারা জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় মুল্যবোধে বিশ্বাসী ম্যাডাম খালেদার এককালীন (এখনো সম্ভবত) ডানহাত কাছের মানুষ মিষ্টার ফালু।
জয় হোক তোমাদের ভন্ডামীর।

থুঃ

কিছু কিছু মুহূর্ত বা ক্ষণ থাকে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। শব্দভাণ্ডার কে মনে হয় অসম্পূর্ণ, যুতসই শব্দ না পেয়ে চুল ছেড়া আর আঙুল মটকানো ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা। আমার মনে হয়, মনে হয় কেন বলব, অবশ্যই বলব যে যাঁদের অন্তরে বিন্দু পরিমাণের মানবিকতা বোধ আছে তারা সবাই বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই বিশেষ মুহূর্তগুলো অতিবাহিত করছেন। আর আমার মত যারা কথা কম বলে লেখার মাধ্যমে নিজের অনুভূতিকে প্রকাশ করেন তাদের কথা নাই বা বললাম।
আজকে মানিকগঞ্জে ৫জন (কেউ কেউ বলেছেন ৭ জন, এর দু দিন আগে ৪জন) নিরপরাধ মানুষের রক্তের স্রোত দেখে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারছিনা, কাররই থাকার কথা নয়। কেউ কেউ বলবেন নিরপরাধ কে্ন বলছি তাদের? নারে ভাই, আপনাদের কাছে যেটা অপরাধ আমার কাছেও সেটা অপরাধ, তবে কেন বলছি নিরপরাধ? ভাইরে, তারা কি এমনই অপরাধ করেছিল যে গুলি করে তাঁদের হত্যা করতেই হবে?
আজকে যারা অতি উৎসাহি হয়ে এই হত্যা গুলোকে বাহবা দিচ্ছেন কিংবা ইয়ে ইয়ে করছেন কিংবা হত্যার পিছনে যুক্তি দেখাচ্ছেন তাদের জন্য বলছি, আপনারা সেই একাত্তরে যাদের বর্বর আর হানাদার বলেছিলেন আজ কালের বিবর্তনে আপনারাও সেই একই ভূমিকা রাখছেন। হয়ত আমার কথা দলীয় ট্যাগ দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন, যান তাহলে সেই মায়েদের কাছে, যারা তাঁদের সন্তান কে হারিয়েছেন, জিজ্ঞেস করুন তাঁদের ভাই, বোন, স্ত্রীকে, প্রেমিকা কে, কি ভাবছে তারা ঘাতক কে? আজকে কেন যেন মনে হচ্ছে, একাত্তরে ফাকিস্তানীরা এদেশের মানুষগুলোকে হত্যা করে যে পৈচাশিক সুখ পেয়েছিল, আজ কে এই পুলিশ আর তাঁদের হুকুম দাতারা সেই একই সুখ ভোগ করছে। এই দুয়ের পার্থক্য তাহলে কোথায়? পশু সেতো পশুই, সে দেশিই হক আর বিদেশীই হোক। আমাদের মিডিয়াগুলোও যেন আজ এই সব পশুদের খোঁয়াড়ে পরিণত হয়েছে।
আমাদের দেশের অধিকাংশ মিডিয়ার নিউজ কভারেজের টেকনিক দেখলে যে কোন সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
এরা কি এতই বিবেক জ্ঞানহীন? ‘ঢিলেঢালা হরতাল পালিত’ বলতে তারা কি বুজাতে চায়? নাকি তারা পরোক্ষভাবে বুজাতে চায় যে ৪-৫টা লাশ পড়েনা, গাড়ি ভাঙ্গা হল না, আগুন দেয়া হলনা, এ আবার কিসের হরতাল? মিডিয়ার সাথে জড়িতরা কি এতই মনুষত্বহীন। হায় আল্লাহ! এরাই বুজি আমার দেশের দর্পণ!
হরতাল যেহেতু একনও বেআইনি নয়, তাই সেটা যে কেউ করতে পারে, আবার সেটা পালন না করারও অধিকার যে কোন নাগরিকের আছে। মিডিয়া আসলে চাচ্ছে কি?
দশম কিংবা ইন্টারে বাংলা বইয়ে পড়েছিলাম ‘পুলিশ হচ্ছে উর্দি পড়া মাস্তান। হাতে অস্র থাকলে নিরীহ প্রাণীর দিকে চোখ যায়’। গল্পটা সম্ভবত ভারত বিভাগের সময়কার। কি আশ্চর্য…… ইংরেজ গেল, পাকি গেল, স্বৈরাচার গেল, কিন্তু উর্দি পড়া মাস্তানদের মাস্তানি গেলনা! উন্নতিটা তাহলে হল কিসে? শাহবাগি জাগরণে, বিশাল বিল বোর্ডে স্ফীত বক্ষশীলা পণ্য মেয়ের মুচকি হাসিতে, নিশিতে কল কইরো আমার ফোনে, নাকি রাত জেগে কম মূল্যে প্রেম আর পরকীয়া করাতে?
প্রকাশ্যে গুলি করা যে দেশে হালাল সে দেশ আর যাই হোক গণতান্ত্রিক দেশ হতে পারেনা। its just a police state. আর যারা আধুনিক রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অভিজ্ঞ, তারা জানেন বর্তমান সময়ের সংজ্ঞায় পুলিশ স্ট্যাট বলতে কিরূপ নীচ মানের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বুজায়। আর আমাদের দেশে মানবতাবাদীরা, সুশীলরা, প্রগতিশীলরা সেই কুৎসিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় চাপাবাজি করে বউ বাচ্চা নিয়ে সুখী পরিবারের আইডল গিরি দেখাচ্ছেন। এবং তারা অবশ্যই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি তবে মানসিক বোধসম্পন্ন মানুষ কিনা তাতে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।