অভিবাসী সংকট নাকি মানবিক সংকট

বছর ব্যাপী যে দুর্বিষহ সংবাদ আমাদেরকে প্রায় প্রতি সপ্তাহ কিংবা মাসে শুনতে এবং পাশাপাশি করুণ পরিণতি’র সাক্ষী হয়ে নির্বাক থাকতে হয়েছে এবং হচ্ছে, সেটি হচ্ছে অভিবাসীর করুণ মৃত্যু। গত কয়েক সপ্তাহে সেটি এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এটি নি:সন্দেহে বর্তমান বিশ্বের মানব ইতিহাসের অন্যতম দুর্যোগ হিসেবে ইতিমধ্যেই ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে।
কিন্তু দু:খ জনক এবং লজ্জার বিষয় হচ্ছে মানবিক এই দুর্যোগ কোন প্রাকৃতিক কারনে নয়, বরং মানব সৃষ্ট।
এই মানবিক দুর্যোগ আপাত দৃষ্টিতে আঞ্চলিক বলে মনে করে অনেকেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিচ্ছেন, সমালোচনা করছেন সেই সকল দেশের মানুষ এবং রাষ্ট্রীয় কোন্দলকে।
হ্যাঁ, বাহ্যিক দিক থেকে সেটি সত্য কিন্তু পরম সত্য নয়।
বিশ্ব রাজনীতির কালা থাবা আর আধিপত্য বিস্তারের গিনিপিগ হিসেবে যখন কোন দেশের জনগন, রাষ্ট্র ও সরকার কাজ করে তখন সেটি আর আঞ্চলিক বা স্বদেশীয় ‘মেটার’ থাকেনা। তাই আজকের এই মানবিক বিপর্যয় মোটেই আর গোটি কয়েকটি দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নয়, এটি সমগ্র পৃথিবীর অন্যতম দুর্যোগ।
কিন্ত আমরা কি দেখছি? দেখছি যাদের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা, যারা পারত এবং পারা সম্ভব এই সকল মানব সন্তানদের সাগরে মর্মান্তিক মৃত্যু অথবা শ্বাস রুদ্ধ হয়ে করুনভাবে জীবনের সকল কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া থেকে বিরত রাখতে তার বাড়িয়ে দিচ্ছে সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা। তাদের এই অমানবিক, অমানুষী আচরন কে কিছুটা মানবিক প্রলেপ দিতে তারা ব্যবহার করছে ‘অভিবাসী সমস্যা’।
যে ইউরোপ মানবাধিকার নিয়ে সমগ্র পৃথিবীকে থাপড়িয়ে বেড়াচ্ছে, আমরা দেখছি তাদের সমুদ্র সীমানা আর স্থল সীমান্তে অসহায় নারী আর শিশুদের ভাসমান আর গলিত লাশ!
প্রশ্ন জাগে, তাদের কেন এত অনিহা এই মানব সন্তানদের কে নিজেদের দেশে আশ্রয় দিতে? তাদের কে রক্ষা করতে হাত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে কেন এত ধীর যেখানে অন্য দেশে বোমা আর ড্রোন আক্রমণ চালাতে তড়িৎ?
বর্ণ, ধর্ম, আঞ্চলিকতা- এই সব শব্দ বলা হচ্ছে আজকের আধুনিক পৃথিবীর অভিধান থেকে উঠে গেছে কিন্তু আমরা দেখছি সেটি বরং আরো অশ্লীলভাবে কর্ম, আচরন এমনকি কথায় উপ্রোতভাবে উপস্থিত।
মানুষের কাছে তার জীবন সবচেয়ে বেশি মুল্যবান। জীবনকে বাচিঁয়ে রাখার জন্য এমন কোন উপায় বা অবলম্বন নেই যা সে তার সে নিশ্বাস থাকা পর্যন্ত চেষ্টা করবে না। অথচ আমরা দেখছি এই সব মানব সন্তান নিজের সেই জীবনকেই বাজি রাখছে জীবনকে রক্ষা করার জন্য। ইউরোপে যারা পাড়ি জমায়, একটা সময়, সেটি ছিল অপেক্ষাকৃত ভাল জীবনের সন্ধানে। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় সেটি ভাল জীবন নয়, বরং ইউরোপ মুখী যাত্রা বেঁচে থাকার শেষ প্রচেষ্টার অংশ মাত্র। আবার এও বলা যায়, তাদের এ অনিশ্চিত যাত্রা অনেকটা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার স্থান পরিবর্তন। মৃত্যু যেখানে নিশ্চিত এবং স্থান পরিবর্তনে মৃত্যুর হাত থেকে কিছুটা দুরত্বই এই ‘অভিবাসী’দের একটা ফ্যান্টাসি?!!!!
আমরা সূবিধাভোগীরা আহঁ, হু আর কিছুটা মায়া কান্না করেই নিজেদের অবস্থান কতটা ‘স্থিতিশীল সেটাই হয়ত অনুভব করার চেষ্টা করি! আর পৃথিবীর হর্তা কর্তারা এক হাতে হুস্কি আর অন্য হাতের বগলে হুকারদের জড়িয়ে শীৎকার করে বলে…. We must Do Something

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব